#Post Title #Post Title #Post Title

এক্সপির সেই জনপ্রিয় ছবির নেপথ্যে


এক্সপির সেই জনপ্রিয় ছবির নেপথ্যে


উইন্ডোজ এক্সপির জনপ্রিয় ওয়ালপেপারটির গল্প হয়তো অনেকেরই জানা আছে। কিন্তু মাইক্রোসফট আবারও একটি ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে সবুজ পাহাড় আর হালকা মেঘাচ্ছন্ন উইন্ডোজ এক্সপির ব্যাকগ্রাউন্ড ছবিটির কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্বের এখনও অনেক কম্পিউটার ব্যবহারকারী তাদের কম্পিউটার চালু করা মাত্রই ‘আইকনিক’ সেই ছবিটি দেখতে পান। অনেকেই মনে করেন, মাইক্রোসফটের ব্যবহার-বান্ধব সর্বশেষ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এক্সপি।
গত ৮ এপ্রিল এক্সপি অপারেটিং সিস্টেমের জন্য কারিগরি সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মাইক্রোসফট। তবে মাইক্রোসফট এক্সপি থেকে তাদের সহযোগিতা সরিয়ে নিলেও বিশ্বের অনেক কম্পিউটারেই এক যুগ আগের সেই এক্সপি রয়ে গেছে। বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ কম্পিউটারে এখনও এক্সপি ব্যবহূত হচ্ছে।
গত সপ্তাহে মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ ইউটিউবে নয় মিনিটের একটি ভিডিও উন্মুক্ত করেছে, যে ভিডিওতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশিবার দেখা ছবির গল্প উঠে এসেছে।
১৯৯৬ সালে এই বিখ্যাত ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী চার্লস ও’রিয়ার। তবে ছবিটি ২০০১ সালে এক্সপি অপারেটিং সিস্টেম উন্মুক্ত হওয়ার পর বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ও’রিয়ারের কাছ থেকে এ ছবি কিনেছিল মাইক্রোসফট।
মাইক্রোসফট প্রকাশিত ভিডিওচিত্রে চার্লস ও’রিয়ার এই আইকনিক ছবি তোলার ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
ভিডিওতে ও’রিয়ার বর্ণনা করেছেন, কীভাবে একটি ভালো ছবি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। আদতে সাদামাটা সেই ছবিটিই যে আইকনিক হয়ে উঠবে তা বুঝতে পারেননি তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নাপা ভ্যালির এক রৌদ্রোজ্জ্বল নৈসর্গিক দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন তিনি। সম্ভবত উইন্ডোজ এক্সপির কল্যাণে তার সেই ছবিটিই পিসি স্ক্রিনে সবচেয়ে বেশি দেখা ছবি হয়ে ওঠে।
ছবি তোলার দৃশ্য বর্ণনায় ও’রিয়ার বলেন, যখন ছবিটি তোলা হয় তখন তাঁর জীবনে প্রেম এসেছিল। নিজেই গাড়ি হাঁকিয়ে দেখা করতে যেতেন নতুন বান্ধবীর সঙ্গে। সঙ্গে থাকত ক্যামেরাও। চারপাশে ঝলমলে রোদ আর নিসর্গের দিকে তাকিয়ে প্রতিদিনই খোঁজ করতেন ভালো ছবি তোলার পরিবেশের। রাস্তায় গাড়ি ছোটার সময় তার চোখ থাকত রাস্তার দু পাশে। ছবি তোলার দিনটি ছিল অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক। চারপাশে আঙুর বাগান। রাস্তা ছেড়ে সামান্য উঁচু টিলা। সেখানে বেড়ে উঠছে সারি সারি আঙুরের চারা। জানুয়ারি মাস, সবুজ ঘাসে ছেয়ে গেছে নাপা ভ্যালি। আলো এসে পড়েছে তার উপর। গাড়ি থামালেন ও’রিয়ার। মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রইলেন। তারপর ক্যামেরা ধরে তুলে ফেললেন চারটি ছবি। সে ছবিগুলো থেকে পরে একটিই বেছে নেন মাইক্রোসফটের কর্তাব্যক্তিরা।
ও’রিয়ার বলেন, অনেক আলোকচিত্রীই প্রকৃতির ছবি তোলেন এবং অনেকেই ক্যালিফোর্নিয়ার ওই এলাকাটির ছবি তুলেছেন। কিন্তু ভাগ্য ভালো তাঁর। কারণ অসাধারণ ছবি হতে হলে যে আলো প্রয়োজন, তিনি তা পেয়েছিলেন সে মুহূর্তে। তিনি যখন ক্যামেরা তুলে ধরলেন তখনও আকাশে মেঘ ছিল না। কিন্তু ছবি তোলার মুহূর্তেই আকাশে খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘ এসে গেল। এ ছাড়াও ছবির জন্য গুরুত্বপূর্ণ আলোও ছিল সেসময়। তিনি সম্ভবত ভাগ্যবানদের একজন যিনি সে মুহূর্তে আলোটা ধরতে পেরেছিলেন।
চার্লস ও’রিয়ার একসময় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি যে সময় ছবিটা তুলেছিলেন সে সময় তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সর হিসেবে ছবি তুলতেন। নীলাকাশ আর সবুজ ঘাসের দৃশ্যটি তাঁর চোখ ঠিকই খুঁজে নিয়েছিল আর কথা বলে উঠেছিল তার ক্যামেরা। কিন্তু ছবিটি নিজস্ব ভালোলাগা থেকেই তোলা।
সারা বিশ্বে কোটি কোটিবার দেখা হয়েছে ও’রিয়ারের তোলা ছবিটি। কিন্তু যারা অনেকেই ভেবে পান না এটি আসল ছবি কিনা, ভিডিওতে ও’রিয়ার তাদের জন্য জানিয়েছেন, একবার এক প্রতিযোগিতায় এক্সপির ছবিটি কার তোলা প্রশ্ন করা হলে অনেকেই উত্তর দিয়েছিলেন যে ছবিটি ফটোশপ করে সম্পাদনা করা। পরে তিনি সবার ভুল ভাঙিয়ে বলেন, খুব সাধারণ একটি ছবি। অসাধারণ হওয়া ওঠায় ছবিটির পার্থক্য ধরতে অনেকেই চমকে ওঠেন।
ও’রিয়ার তার ছবি তোলার এ ঘটনা বিষয়ে বলেছেন, ‘জানুয়ারি মাস তখন, হঠাত্ খেয়াল করলাম ঘাসগুলো সবুজ আর তর সইল না। গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম আর ঝটপট কয়েকটি ছবি তুলেই দিলাম ছুট। ছবিগুলো আমি ঝটপট তুলেছিলাম খেয়ালবশত; কিন্তু গার্লফ্রেন্ডের কাছে দ্রুত পৌঁছাবার তাড়ায় কি ছবি তুলেছিলাম সেদিকে আর খেয়াল ছিল না। আমার প্রেমিকার নাম ডাফনি লারকিন। এ ছবি তোলার কিছুদিন পরেই ডাফনিকে জীবনসঙ্গী করি আমি।’
ছবি তোলার পর মাইক্রোসফটের কাছে ছবিগুলো পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তা নিয়ে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। ও’রিয়ার বলেন, একদিন তার এজেন্ট ফোন করে তাকে জানাল যে, মাইক্রোসফট তার আসল ছবিটি চেয়ে বসেছে। তারপরই তিনি বুঝতে পারলেন অনেকটা যেন লটারি জিতে গেছেন তিনি।
ও’রিয়ার জানিয়েছেন, ‘আমি যখন ছবিটি তুলেছিলাম তখন এ ছবিটিই যে আমার ভবিষ্যত্ পাল্টে দিতে পারে এমন কোনো ধারণাই ছিল না। এটিই সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত ছবি। এটা যদি বাংলাদেশের কোনো এক গ্রামে নিয়ে গিয়ে দেখানো হয় তবে সেও যেমন চিনতে পারবে তেমনি চীনের ব্যস্ত রাস্তায় যদি কাউকে ছবিটি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় তবে সেও ছবিটির বিষয়ে বলতে পারবে। এখনকার তরুণরাও একদিন এক্সপির গল্প করবে আর বলবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা ছবিটির কথা। কারণ, তাদের এই ছবিটি দেখলেই মনে হবে কোথায় যেন দেখেছি, খুব পরিচিত এক ছবি।’

Leave a Reply